ajkertarunkantho
সোমবার , ১০ এপ্রিল ২০২৩ | ১৬ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
  1. অপরাধ-দুর্নীতি
  2. আইন-আদালত
  3. আন্তর্জাতিক
  4. ইসলাম ও জীবন
  5. কৃষি সমাচার
  6. খেলাধুলা
  7. জনদুর্ভোগ
  8. জাতীয়
  9. ধর্ম ও সংস্কৃতি
  10. প্রবাস সমাচার
  11. বাণিজ্য
  12. বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
  13. বিনোদন
  14. বিশেষ প্রতিবেদন
  15. রাজনীতি

ইতেকাফের গুরুত্ব ও ফজিলত

প্রতিবেদক
নিউজ রুম
এপ্রিল ১০, ২০২৩ ১০:২৯ পূর্বাহ্ণ
ইতেকাফের গুরুত্ব ও ফজিলত

শরিয়তের পরিভাষায় ইতিকাফ বলা হয়, পুরুষের জন্য নিয়তসহ এমন মসজিদে অবস্থান করা, যেখানে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ জামাতে অনুষ্ঠিত হয়। আর মহিলাদের ইতিকাফ হলো, নিয়তসহ ঘরের ভেতরে নামাজের জন্য নির্দিষ্ট স্থানে অবস্থান করা।

আমাদের সৃষ্টিকর্তা আমাদের সৃষ্টি করেছেন একমাত্র তার ইবাদত বন্দেগী করার জন্য। তিনি নিজেই সূরা আয-যারিয়াতের ৫৬ নাম্বার আয়াতে ঘোষণা করেছেন,

وَمَا خَلَقۡتُ الۡجِنَّ وَالۡاِنۡسَ اِلَّا لِيَعۡبُدُوۡنِ
আমার এবাদত করার জন্যই আমি মানব ও জিন জাতি সৃষ্টি করেছি।

অতএব মানবজাতির দায়িত্ব হলো সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছাকে পূর্ণ করা। কাজকর্ম, কথাবার্তা, চলাফেরা দিনে-রাতে অর্থাৎ সর্বাবস্থায় সর্বক্ষন আল্লাহ তা’য়ালার সন্তুষ্টি অর্জন করার চেষ্টা করা এবং তাঁর ইবাদতে ব্যস্ত থাকা।

আল্লাহ তা’য়ালার নৈকট্য লাভের জন্য ফরজ ইবাদাত ছাড়া যেসব ইবাদত করা হয় তার মধ্যে অন্যতম একটি ইবাদত হলো ইতেকাফ। মানব জাতির আত্মার উৎকর্ষ সাধনের জন্য সব ধরনের কুপ্রবৃত্তি দমন করে স্ত্রী, সন্তান, সংসার, ব্যবসা-বাণিজ্য চাকরি-বাকরি ক্ষেত খামার তথা সব ধরনের দুনিয়াবি কাজকর্ম পরিত্যাগ করে একমাত্র আল্লাহ তা’য়ালার নৈকট্য লাভের জন্য দিবারাত্রি তার ঘরে পড়ে থাকাই ইতেকাফের মূল বিষয়।

ইমাম জুহরি র. বলেন, কি আশ্চর্য বিষয় মানুষ ইতিকাফ ছেড়ে দিয়েছে, অথচ মহানবী হযরত মোহাম্মাদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মদিনায় প্রবেশের পর থেকে আল্লাহ তায়ালা তাকে নিজের কাছে ডেকে নেয়ার আগ পর্যন্ত কখনো ইতেকাফ ছাড়েননি।

ইমাম বোখারি তার কিতাবে হাদিস এনেছেন
كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَعْتَكِفُ الْعَشْرَ الْأَوَاخِرَ مِنْ رَمَضَانَ حَتَّى تَوَفَّاهُ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ

রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রমজানের শেষ দশ দিনে ইতিকাফ করতেন যতক্ষণ না আল্লাহ্‌ তা’য়ালা তাঁকে তাঁর কাছে নিয়ে যান। এটি অনেক সম্মানজনক ইবাদাত; কারণ তাতে দুটি উপাসনাকে একত্রিত করা হয়েছে রোযা ও মসজিদে অবস্থান।

ইতেকাফের গুরুত্ব :

হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (রাঃ) বলেন,
اَنَّ النَّبِيَ النَّبِىُ صَلَّ اللهُ علَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يَعْتَكِفُ العَشْرَ الأَواَخِرِ مِنْ رَمَضَانَ حَتَّى تَوَفَّاهُ اللهُ، ثٌمَّ اِعْتَفَ اَزْوَاجُهُ مِنْ بَعْدِهِ-
‘রাসূল (সঃ) মৃত্যু পর্যন্ত রামাযান মাসের শেষ দশ দিন ইতেকাফ করেছেন। অতঃপর তাঁর পরে তাঁর স্ত্রীগণ ইতেকাফ করেছেন।

২০ রমজানুল মুবারকে সূর্যাস্তের কিছুক্ষণ আগে থেকে ২৯ /৩০ রমজান অর্থাৎ ঈদুল ফিতরের চাঁদ দেখা পর্যন্ত পুরুষদের জন্য মসজিদে এবং নারীদের জন্য নিজ গৃহে নামাজের নির্ধারিত স্থানে নিয়মিত ধারাবাহিক অবস্থান করাকে ইতেকাফ বলে।

আল্লামা আইনি (রহঃ) বলেন ইতেকাফ তিন প্রকার:

১।ওয়াজিব: কেউ যদি ইতেকাফ করার মানত করে তাহলে তা পালন করা ওয়াজিব।
২। মুস্তাহাব: রমজানের শেষ ১০ দিন ব্যতীত বছরের যে কোন সময় এতেকাফ করা মুস্তাহাব এমনকি রমজান মাসেও। মুস্তাহাবের সর্বনিম্ন মাত্রা হলো দু’এক মিনিট।
৩। সুন্নতে মুআক্কাদাহ: রমজানের শেষ দশ দিনের ইতেকাফ সুন্নতে মুয়াক্কাদায়ে কেফায়া।

অর্থাৎ কোনো মহল্লা বা গ্রামের দু-একজন এতেকাফ করলেই বাকিরা এ দায়িত্ব থেকে রেহাই পেয়ে যাবে। কিন্তু মহল্লা বা গ্রামবাসীর মধ্যে কেউ যদি ইতেকাফ আদায় না করেন, তবে এই দায়িত্বের প্রতি অবহেলার কারণে সকলেই গুনাহগার হবেন। কাজেই সবার ওপর এই দায়িত্ব আরোপিত যে, আগে থেকে তারা খোঁজখবর নিয়ে দেখবেন, তাদের এলাকার মসজিদে কেউ ইতেকাফ করবে কিনা। যদি এমন পাওয়া না যায়, তাহলে নিজেই তৈরি হয়ে বসে যাবেন।কিন্তু এ কথা মনে রাখতে হবে, বিনিময় বা পারিশ্রমিক দিয়ে কাউকে ইতেকাফে বসানো জায়েজ নয়। কেননা ইবাদতের পারিশ্রমিক দেওয়া ও নেওয়া উভয়ই ইসলামি শরিয়তের নাজায়েজ হারাম। ইতেকাফকারী যেন তার নিজের সর্বস্ব ও সমুদয় সময়কে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য ওয়াকফ করে দেন

ইতেকাফের ফজিলত:

ইতেকাফ অবস্থায় ইতেকাফকারী সার্বক্ষণিক নামাজের সওয়াব পেয়ে থাকেন। যেহেতু মসজিদ আল্লাহর ঘর, সেহেতু ইতেকাফকারী আল্লাহর ঘরের মেহমান হয়ে যান। ইতেকাফের ফজিলত অনেক বেশি। রমজান মাসের শেষ ১০ দিন ইতেকাফ করলে ২৭ রমজান যদি শবে কদর না-ও হয়, তবু এ ১০ দিনের মধ্যে নির্দিষ্ট শবে কদরের ইবাদত ইতেকাফে আদায় হয়ে যায় এবং এর ফলে কদরের রাতের ফজিলতও লাভ হয়ে যায়।

হজরত আয়শা সিদ্দিকা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সাঃ) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি রমজান মাসের শেষ ১০ দিন ইতেকাফ করবে সে দুটি ওমরাহ ও দুটি হজ আদায় করার সওয়াব পাবে।

হযরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত,রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন। ইতেকাফকারী গুনাহ হতে বাঁচিয়া থাকে এবং অন্যান্য যে সকল নেক কাজ সে করতে পারেনা, ঐ সকল নেক কাজের সাওয়াবও লাভ করতে থাকে সে সকল নেক কাজ করনেওয়ালার মত। (মিশকাত)

অন্য এক হাদিসে বর্ণিত আছে, যে ব্যক্তি একদিন ইতেকাফ করে আল্লাহপাক তাঁর এবং জাহান্নামের মাঝে তিন খন্দক দূরত্ব রাখবেন। এই দূরত্ব হবে আসমান ও জমিনের দূরত্বের চেয়েও অধিক।

হযরত নবী করিম (সাঃ)বলেছেন, যারা অন্তত এক দিন এক রাত ইতেকাফ করবে, তাদেরও জাহান্নামের মাঝখানে এরূপ তিনটি খন্দক দূরত্ব হবে, যার প্রত্যেকটি খন্দকের প্রশস্ত হবে ৫০০ বছরের রাস্তা।

ইতেকাফ অবস্থায় মানুষ আল্লাহ তা’য়ালার দরবারে এভাবে উপস্থিত হয়ে থাকে যে, দুনিয়ার কোনো কিছুর প্রতিই তার কোন মনোযোগ থাকে না। ইতেকাফকারী তখন মৃত ব্যক্তির মতোই নিজেকে আল্লাহ তা’য়ালার ইচ্ছার নিকট অর্পণ করে দেন। একজন মানুষ যতক্ষণ ইতেকাফ অবস্থায় থাকে ততক্ষণ তার প্রতিটি সময় ইবাদত হিসেবে লেখা হয়। তার হাঁটাচলা উঠাবসা ঘুম, খাওয়া-দাওয়া, প্রতিটি নকলো হরকত ইবাদতে পরিগণিত হয়।

ইতেকাফের প্রতি রাসূলে কারিম (সাঃ)-এর বিশেষ আগ্রহ ছিল। তাইত তিনি মদিনায় যাওয়ার পর থেকে প্রতি বছর রমযানের শেষ ১০ দিন ইতেকাফ করতেন এবং অত্যন্ত গুরুত্বারোপ করতেন। তিনি কখনো পুরো রমযান মাস ইতেকাফ করেছেন। একবার বিশেষ কারণে রমজান শরিফের ইতেকাফ করতে পারেননি, তাই শাওয়াল মাসে ১০ দিন রোযা রেখে তিনি ইতেকাফ করেছেন (বুখারি শরিফ)

ইতেকাফের ফজিলত শুধু পুরুষদের জন্য খাস নয়। নারীরাও এই ফজিলতে শরিক হতে পারেন।

হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (রাঃ) বলেন,

اَنَّ النَّبِيَ النَّبِىُ صَلَّ اللهُ علَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يَعْتَكِفُ العَشْرَ الأَواَخِرِ مِنْ رَمَضَانَ حَتَّى تَوَفَّاهُ اللهُ، ثٌمَّ اِعْتَفَ اَزْوَاجُهُ مِنْ بَعْدِهِ-
‘রাসূল (সঃ) মৃত্যু পর্যন্ত রামাযান মাসের শেষ দশ দিন ইতেকাফ করেছেন। অতঃপর তাঁর পরে তাঁর স্ত্রীগণ ইতেকাফ করেছেন।

কিন্তু নারীদের মসজিদে ইতেকাফ করা উচিত নয়। তারা ইতেকাফ নিজ গৃহে করবেন। তার ঘরে নামাজ ও ইবাদতের জন্য যে স্থানটি আলাদা করে রাখা আছে, সে জায়গায় ইতেকাফ করবেন। যদি আগে থেকে ঘরে এমন স্থান নির্ধারিত না থাকে তাহলে ইতেকাফের আগে ঘরে একটি স্থান করে নেবেন এবং সেখানেই ইতেকাফ করবেন।
নারী বিবাহিত হলে ইতেকাফের জন্য স্বামীর অনুমতি নিতে হবে। স্বামীর অনুমতি ছাড়া তাদের জন্য ইতেকাফ করা জায়েজ নয়। কিন্তু স্বামীর উচিত হলো স্ত্রীকে অনুমতি দেওয়া এবং বিনা কারণে তাদের ইতেকাফ থেকে মাহরুম না করা।

নারীদের ইতেকাফের জন্য হায়েজ ও নেফাস থেকে পবিত্র থাকা জরুরি। যদি কোনো নারী ইতেকাফ শুরু করেন, অতঃপর ইতেকাফ থাকা অবস্থায় হায়েজ শুরু হয়ে যায়, তাহলে হায়েজ শুরু হওয়ার সাথে সাথেই ইতেকাফ ছেড়ে দেওয়া ওয়াজিব। এ পরিস্থিতিতে ঐ নারী যেদিন ইতেকাফ ছাড়বেন, শুধু সেদিনের ইতেকাফ কাজা করবেন। কাজা করার নিয়ম হলো হায়েজ থেকে পবিত্র হওয়ার পর যে কোনো একদিন রোজা রেখে ইতেকাফ করবেন। যদি রমজান মাসের দিন বাকি থাকে তাহলে রমজানেও কাজা করতে পারবেন।

নারীরা ঘরের যে স্থান ইতেকাফের জন্য নির্দিষ্ট করবেন, সে স্থানটি ইতেকাফকালীন তার জন্য মসজিদের হুকুমের অন্তর্ভুক্ত হবে। ইসলামী শরিয়তের কোনো জরুরত ব্যতীত সেখান থেকে সরে যাওয়া জায়েজ হবে না। ঘরের অন্য রুমে বা রান্নাঘরেও যেতে পারবে না। নির্দিষ্ট সীমার বাইরে চলে গেলে ইতেকাফ নষ্ট হয়ে যাবে।

পুরুষের যেমন ইতেকাফ করতে চাইলে নিয়ত করতে হয়, রোজা রাখতে হয়, সুস্থ হতে হয়, কোনো নির্দিষ্ট মসজিদে অবস্থান করতে হয়, তেমনি নিজ গৃহে ইতেকাফকালীন নারীদের জন্যও এসব শর্ত সমানভাবে প্রযোজ্য।

লেখক: মুফতি ফয়সাল মুনতাসির
শিক্ষক, জামি’আ ইসলামিয় ফতেপুর

সর্বশেষ - সারাদেশ

আপনার জন্য নির্বাচিত