মানুষ পৃথিবীর সবচেয়ে বুদ্ধিমান প্রাণী। বুদ্ধির উৎস মূলত মস্তিষ্ক বা মাথা। কিন্তু এর মধ্যে কী রহস্য লুকিয়ে আছে? এমন প্রশ্নের উত্তর খোঁজা তথা মানব মস্তিষ্কের রহস্য উদঘাটনের চেষ্টা মানুষের বহুদিনের। সেই চেষ্টা থেকেই যুগে যুগে ধূসর রঙের পদার্থটির হাজার হাজার নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে।
এসব মস্তিষ্ক সাধারণত কাচের বৈয়ামে ভরে গবেষণাগার ও হাসপাতালে সংরক্ষণ করা হয়। বিশ্বজুড়ে এমন বহু সংগ্রহশালা রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় সংগ্রহশালা রয়েছে ইউরোপের দেশ ডেনমার্কের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে।
ইউনিভার্সিটি অব ওডেন্সের ভূগর্ভস্থ একটি কক্ষের দেয়ালে দেয়ালে রাখা হয়েছে অসংখ্য তাক। সেইসব তাকে সারিসারি সাজিয়ে রাখা হয়েছে বালতির মতো সাদা পাত্র। এইসব পাত্রে সংরক্ষণ করা রয়েছে মানুষের মস্তিষ্ক। যার সংখ্যা ৯ হাজার ৪৭৯টি।
বিজ্ঞান বিষয়ক সংবাদমাধ্যম সাইন্স অ্যালার্টের এক প্রতিবেদন মতে, মানসিক রোগীদের মরদেহ থেকে মস্তিষ্কগুলো সংগ্রহ করা হয়েছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় তথা ১৯৪৫ সাল থেকে আশির দশক পর্যন্ত টানা চার দশক ধরে এই সংগ্রহের কাজ করা হয়েছে।
মস্তিষ্কগুলো মূলত ফরমালিন দিয়ে সংরক্ষণ করা হয়েছে। যার সংগ্রহে নিজের জীবনের বড় একটা সময় ব্যয় করেছেন ডেনমার্কের খ্যাতনামা মনোরোগ বিশেষজ্ঞ এরিক স্টমগ্রেন।
মনোরোগবিদ্যার ইতিহাস বিশেষজ্ঞ জেসপার ভ্যাকজি ক্রাগের ভাষ্যমতে, মস্তিষ্কগুলো গবেষণার জন্য সংগ্রহ করা হয়েছিল। এরিক স্টমগ্রেন ও তার সহযোগীদের বিশ্বাস ছিল, সেগুলো থেকে তারা মানসিক রোগের বিষয়ে তথ্য পাবেন।
মস্তিষ্কগুলো সংগ্রহ করা হত ডেনমার্কের বিভিন্ন মনোরোগ হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীদের মরদেহ থেকে। তবে এজন্য ওই রোগী বা তাদের পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে অনুমতি নেয়া হত না। কারণ সে সময় মানসিক রোগীদের অধিকারের বিষয়টি মোটেও গুরুত্ব পেত না।
ইউনিভার্সিটি অব ওডেন্সে মস্তিষ্কের ওই সংগ্রহশালার পরিচালক মার্টিন ওয়াইরেনফেল্ডৎ নেইলসেন বলেন, সে সময়ে ডেনমার্কে মানসিক রোগ নিয়ে যারা মারা গিয়েছিলেন, তাদের সবার ময়নাতদন্ত করে মস্তিষ্ক সংগ্রহ করা হয়েছিল।
তবে দিন গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে এই রোগীদের অধিকারের বিষয়ে সচেতন হয় ডেনমার্ক। ময়নাতদন্তের পদ্ধতিতেও আনা হয় পরিবর্তন। এসবের জেরে ১৯৮২ সালে মস্তিষ্ক সংগ্রহ বন্ধ করা হয়। এরপর বিতর্ক ওঠে আগে থেকে সংগ্রহে থাকা বিপুল পরিমাণ মস্তিষ্কগুলোর কি হবে। শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত হয়,এগুলো গবেষণার জন্য সংরক্ষণ করা হবে।