সেই ভয়াল ২২ নভেম্বর আজ। আজ থেকে ৫৩ বছর আগে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন এই দিনে পাক হানাদার বাহিনী ও এদেশীয় দোসরদের পরিকল্পিত পৈশাচিক হামলায় তৎকালীন তেরশ্রী স্টেটের জমিদার বাবু সিদ্ধেশ্বর প্রসাদ রায় চৌধুরী ও তেরশ্রী কলেজের অধ্যক্ষ আতিউর রহমান সহ ৪৩ জন নিরীহ মানুষ নিহত হন।
সুজলা-সুফলা শস্য শ্যামলা অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ঘেরা তেরশ্রী গ্রামের ঘুমন্ত নারী-পুরুষ, শিশু, আবাল বৃদ্ধ বনিতার উপর নৃশংস হত্যাযজ্ঞ চালায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। রাতভর প্রায় ৭ ঘন্টা নিরীহ মানুষের উপর এমন হত্যাযজ্ঞে তেরশ্রী গ্রাম যেন মৃত্যু পুরীতে পরিণত হয়। এসময় আকাশ বাতাস ভারি হয়ে ওঠে। ঘাতকদের গোলা-বারুদ ও বেওনেটসহ সমর অস্ত্রের শব্দে আশপাশের এলাকায় আতঙ্কিত প্রকম্পিত হয়ে ওঠে।
হত্যাযজ্ঞ শেষে ভোরের দিকে এদেশীয় দোসরদের সক্রিয় সহযোগিতায় নির্বিঘ্নে আনন্দ উৎফুল্ল করতে করতে ক্যাম্পে চলে যান পাকিস্তানি আর্মি। এমন বর্ণনা করে গণমাধ্যমের কাছে বর্বরোচিত ওই কাল রাত্রের লোমহর্ষ বর্ণনা তুলে ধরেন স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধা সহ প্রবীণ এলাকাবাসী। তারা বলেন, ওই রাতে ঘুমন্ত মানুষকে গুলি করে ও বেওনেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে এবং আগুনে পুড়ে হত্যা করেছে পাক হানাদার বাহিনী।
এদিকে তেরশ্রী ট্রাজেডিতে নিহতদের স্মরণে শুক্রবার (২২ নভেম্বর) সকালে তেরশ্রী স্মৃতিফলকে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ করেন মানিকগঞ্জের নবাগত জেলা প্রশাসক ড. মানোয়ার হোসেন মোল্লা।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন, ঘিওর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুল ওয়ারেস, সহকারি কমিশনার (ভূমি) নুরজাহান আক্তার সাথী, থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম, বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু বক্কর সিদ্দিক, জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের মানবসম্পদ উন্নয়ন সম্পাদিকা খন্দকার ফারহানা ইয়াসমিন আতিকা, উপজেলা বিএনপির সভাপতি মীর মানিকুজ্জামান মানিক, সাংগঠনিক সম্পাদক মো. মিজানুর রহমান খান কুদরত, বড়টিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবুল হোসাইন, অ্যাডভোকেট ফিরোজ আলম বাবু, পয়লা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মোশারফ হোসেন মানিকসহ বিভিন্ন স্তরের সরকারি বেসরকারি কর্মকর্তাবৃন্দ- প্রতিনিধি, বিভিন্ন রাজনৈতিক সামাজিক ও শেষ্বাসেবী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ এবং গণমাধ্যম কর্মী উপস্থিত ছিলেন।
ভয়ংকর কালরাত্রির সেই লোমহর্ষ ঘটনার বর্ণনা করে মানিকগঞ্জ জেলা প্রেসক্লাবের সিনিয়র সহ-সভাপতি বিশিষ্ট সাংবাদিক এ. বি.খান বাবু বলেন, পৈশাচিক হত্যাযজ্ঞের ৫৩ বছর পেরিয়ে গেলেও নিহতদের স্মরণে এখনো সেরকম কোন কিছু করা হয়নি। তাদের পরিবারের সদস্যদের কেউ খোঁজখবর রাখেন না। তেরশ্রী জমিদার স্টেটের বর্তমান উত্তরাধিকারী বাবু শমেশ্বর প্রসাদ রায় চৌধুরী এখনো বেঁচে আছেন।