১০:৩৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ঘিওরে অনিয়ম-দুর্নীতির রাঘব বোয়াল ইউএনও আমিনুল ইসলাম

এ.বি.খান বাবু , বিশেষ প্রতিবেদক:

অনিয়ম-দুর্নীতি আর ঘুষ বানিজ্যের অভিযোগ উঠেছে মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আমিনুল ইসলামের বিরুদ্ধে। সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পের টাকা আত্মসাৎ, অবৈধ ড্রেজার বানিজ্যসহ তার বিরুদ্ধে রয়েছে অসংখ্য দূর্নীতির বিশাল শ্বেতপত্র।

তিনি ৩৫ তম ব্যাচের (বিসিএস) কর্মকর্তা। ২০২৩ সালের ৬ আগস্ট ঘিওর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেন এই কর্মকর্তা। তিনি যোগদানের পর থেকেই টাকার নেশায় বিভোর হয়ে পড়েন। তিনি কৌশলে খেলেছেন দুর্নীতির রাঘব বোয়ালের খেলা!

অনুসন্ধানে জানাগেছে, উপজেলা পরিষদের ২০২৩-২৪ অর্থ বছরের অভ্যন্তরীন উন্নয়ন সহায়তা তহবিলের আওতায় ৫টি প্যাকেজ বরাদ্দ দেয়া হয়। উপজেলার বাসা বাড়ি মেরামত,ড্রেনেজ মেরামত এবং রাস্তা সংস্কারের জন্য ৪০ লাখ টাকা বরাদ্দ পান ইউএনও। এই প্রকল্পের আওতায় কোন কাজ করা হয়নি। এই প্রকল্প কাজ না করেই ৪০ লাখ টাকা বিল উত্তোলন করে নিজে আত্মসাত করেছেন। এছাড়া একই অর্থ বছরে ইউনিয়ন পরিষদে মশা নিধন কার্যক্রমে উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদে যন্ত্রপাতি কেনাকাটার জন্য ২০ লাখ টাকা বরাদ্দ পান এই কর্মকর্তা। এখাতের আওতায় কোন যন্ত্রপাতি কেনাকাটা হয়নি। যন্ত্রপাতি না কিনে তিনি বরাদ্দের ২০ লাখ টাকা আত্মসাত করেন। এছাড়া ঘিওরের অবৈধ ড্রেজার ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ড্রেজার প্রতি মাসে একলক্ষ থেকে ৯০ হাজার টাকা করে ঘুষ নিয়ে অবৈধ ড্রেজারের বৈধতা দেন তিনি। এই খাত থেকে গত একবছরে তিনি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতির কাছে সরকারি জলমহাল ইজারা দিয়ে তার কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা নিয়ে তাকে জলমহাল থেকে মাটি বিক্রির অনুমতি দিয়েছেন এই কর্মকর্তা। টেন্ডার ছাড়াই সরকারি গাছ কেটে বিক্রি করে সে টাকাও নয়ছয় করেছেন তিনি।

এছাড়া চলতি বছরের জুলাই মাসে বার্ষিক উন্নয়ন (এডিপির) আওতায় ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প বিকাশে বেকার যুবকদের ( নারী পুরুষ) হস্তশিল্প প্রশিক্ষণের টাকা ব্যাপক হরিলুট করেছে তিনি। ওই প্রশিক্ষণে প্রশিক্ষক হিসেবে নিজের নামে বিল ভাউচার করেছেন তিনি। এবং প্রশিক্ষক হিসেবে তার অফিসের আরো ৪ জনের নামে বিল বাউচার করে বেকার যুবকদের টাকা আত্মসাত করেছেন। প্রশিক্ষণর্থীদের দুইদিন প্রশিক্ষণ করানো হয়। উপজেলা হলরুমে প্রশিক্ষণ করিয়ে বাহিরে একটি প্যান্ডেল বাবদ বিল বাউচার করা হয়েছে। এই খাতেও ইউএনও ২ লাখ টাকা নয়ছয় করেছেন।

ঘিওর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মেম্বারদের বেতন উত্তোলনের সময় তাদের কাছ থেকে ৫০০ টাকা থেকে ১ হাজার টাকা পর্যন্ত আদায় করা হয়। এই টাকা তার সিএ আতাউয়ের মাধ্যমে নেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া তিনি উপজেলা ভবনের ১৮ টি মেহুগুনি গাছ ৯০ হাজার টাকায় বিক্রি করেছে। কমিটির কোন অনুমতি ছাড়া তিনি নিজেই গাছ বিক্রি করে ৫০ হাজার টাকা আত্মসাত করেছেন। এনিয়ে বেশকিছু গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়। কিন্তু তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।

ক্ষুদ্র হস্তশিল্প প্রশিক্ষণের ব্যাপারে উপজেলা বাস্তবায়ন প্রকল্প কর্মকর্তা সিরাজুল ইসলাম বলেন, আমি প্রশিক্ষণে প্রশিক্ষক হিসেবে ২ হাজার টাকা পেয়েছি। কিন্তু আমার নামে ৬ হাজার টাকার ভাউচার দেখে আমি অবাক হয়েছি। হাজিরার স্বাক্ষর নিয়ে এই বিল ভাউচার করা হয়েছে। এটা খুবই দুঃখজনক।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপজেলা পরিষদ উন্নয়ন কমিটির এক সদস্য জানান, ইউএনও আমিনুল ইসলাম বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ না করেই  লাখ লাখ টাকা নিজেই আত্মসাত করেছেন। একসঙ্গে ৬০ লাখ টাকা প্রকল্পের কাজ না করেই তিনি সম্পূর্ণ টাকা নিজের পকেটে ভরেছেন। এটা গুরুতর অপরাধ ও প্রতারণা।

ঘিওর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম বলেন, কাজ কিছু শেষ করা হয়েছে এবং কিছু কাজ চলমান রয়েছে। ক্ষুদ্র হস্তশিল্প প্রশিক্ষণের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন আমরা ক্ষুদ্র হস্তশিল্প যুবকদের স্বাবলম্বী করতে অনেক কাজ করেছি। আপনাকে এসব তথ্য দেয় কারা। মশা নিধন যন্ত্রপাতি কেনাকাটা হয়েছে কি’না এবিষয়ে জানত চাইলে তিনি বলেন আপনি উপজেলা ইঞ্জিনিয়ারকে জিজ্ঞেস করেন। কেনাকাটা না করা হলে সরকারি টাকা ফেরত দেয়া হবে।

ঘিওর উপজেলা প্রকৌশলী আশরাফুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, মশা নিধনের কোন যন্ত্রপাতি এখনো কেনা হয়নি। বিতরণ হবে কিভাবে। আর উপজেলা অভ্যন্তরীণ বাসাবাড়ি ও রাস্তা মেরামত প্রকল্পের টাকা ইউএনওর নামে বিল পে-অর্ডার করে রাখা হয়েছে। এরমানে বিল উত্তোলন দেখানো হয়েছে। কিন্ত কোন কাজ তো করা হয়নি। অথচ দেখানো হয়েছে কাজ সম্পূর্ণ করা হয়েছে।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

প্রকাশকাল : ০৮:৩৩:৫০ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৬ অগাস্ট ২০২৪
২৬৭ Time View

ঘিওরে অনিয়ম-দুর্নীতির রাঘব বোয়াল ইউএনও আমিনুল ইসলাম

প্রকাশকাল : ০৮:৩৩:৫০ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৬ অগাস্ট ২০২৪

অনিয়ম-দুর্নীতি আর ঘুষ বানিজ্যের অভিযোগ উঠেছে মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আমিনুল ইসলামের বিরুদ্ধে। সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পের টাকা আত্মসাৎ, অবৈধ ড্রেজার বানিজ্যসহ তার বিরুদ্ধে রয়েছে অসংখ্য দূর্নীতির বিশাল শ্বেতপত্র।

তিনি ৩৫ তম ব্যাচের (বিসিএস) কর্মকর্তা। ২০২৩ সালের ৬ আগস্ট ঘিওর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেন এই কর্মকর্তা। তিনি যোগদানের পর থেকেই টাকার নেশায় বিভোর হয়ে পড়েন। তিনি কৌশলে খেলেছেন দুর্নীতির রাঘব বোয়ালের খেলা!

অনুসন্ধানে জানাগেছে, উপজেলা পরিষদের ২০২৩-২৪ অর্থ বছরের অভ্যন্তরীন উন্নয়ন সহায়তা তহবিলের আওতায় ৫টি প্যাকেজ বরাদ্দ দেয়া হয়। উপজেলার বাসা বাড়ি মেরামত,ড্রেনেজ মেরামত এবং রাস্তা সংস্কারের জন্য ৪০ লাখ টাকা বরাদ্দ পান ইউএনও। এই প্রকল্পের আওতায় কোন কাজ করা হয়নি। এই প্রকল্প কাজ না করেই ৪০ লাখ টাকা বিল উত্তোলন করে নিজে আত্মসাত করেছেন। এছাড়া একই অর্থ বছরে ইউনিয়ন পরিষদে মশা নিধন কার্যক্রমে উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদে যন্ত্রপাতি কেনাকাটার জন্য ২০ লাখ টাকা বরাদ্দ পান এই কর্মকর্তা। এখাতের আওতায় কোন যন্ত্রপাতি কেনাকাটা হয়নি। যন্ত্রপাতি না কিনে তিনি বরাদ্দের ২০ লাখ টাকা আত্মসাত করেন। এছাড়া ঘিওরের অবৈধ ড্রেজার ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ড্রেজার প্রতি মাসে একলক্ষ থেকে ৯০ হাজার টাকা করে ঘুষ নিয়ে অবৈধ ড্রেজারের বৈধতা দেন তিনি। এই খাত থেকে গত একবছরে তিনি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতির কাছে সরকারি জলমহাল ইজারা দিয়ে তার কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা নিয়ে তাকে জলমহাল থেকে মাটি বিক্রির অনুমতি দিয়েছেন এই কর্মকর্তা। টেন্ডার ছাড়াই সরকারি গাছ কেটে বিক্রি করে সে টাকাও নয়ছয় করেছেন তিনি।

এছাড়া চলতি বছরের জুলাই মাসে বার্ষিক উন্নয়ন (এডিপির) আওতায় ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প বিকাশে বেকার যুবকদের ( নারী পুরুষ) হস্তশিল্প প্রশিক্ষণের টাকা ব্যাপক হরিলুট করেছে তিনি। ওই প্রশিক্ষণে প্রশিক্ষক হিসেবে নিজের নামে বিল ভাউচার করেছেন তিনি। এবং প্রশিক্ষক হিসেবে তার অফিসের আরো ৪ জনের নামে বিল বাউচার করে বেকার যুবকদের টাকা আত্মসাত করেছেন। প্রশিক্ষণর্থীদের দুইদিন প্রশিক্ষণ করানো হয়। উপজেলা হলরুমে প্রশিক্ষণ করিয়ে বাহিরে একটি প্যান্ডেল বাবদ বিল বাউচার করা হয়েছে। এই খাতেও ইউএনও ২ লাখ টাকা নয়ছয় করেছেন।

ঘিওর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মেম্বারদের বেতন উত্তোলনের সময় তাদের কাছ থেকে ৫০০ টাকা থেকে ১ হাজার টাকা পর্যন্ত আদায় করা হয়। এই টাকা তার সিএ আতাউয়ের মাধ্যমে নেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া তিনি উপজেলা ভবনের ১৮ টি মেহুগুনি গাছ ৯০ হাজার টাকায় বিক্রি করেছে। কমিটির কোন অনুমতি ছাড়া তিনি নিজেই গাছ বিক্রি করে ৫০ হাজার টাকা আত্মসাত করেছেন। এনিয়ে বেশকিছু গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়। কিন্তু তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।

ক্ষুদ্র হস্তশিল্প প্রশিক্ষণের ব্যাপারে উপজেলা বাস্তবায়ন প্রকল্প কর্মকর্তা সিরাজুল ইসলাম বলেন, আমি প্রশিক্ষণে প্রশিক্ষক হিসেবে ২ হাজার টাকা পেয়েছি। কিন্তু আমার নামে ৬ হাজার টাকার ভাউচার দেখে আমি অবাক হয়েছি। হাজিরার স্বাক্ষর নিয়ে এই বিল ভাউচার করা হয়েছে। এটা খুবই দুঃখজনক।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপজেলা পরিষদ উন্নয়ন কমিটির এক সদস্য জানান, ইউএনও আমিনুল ইসলাম বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ না করেই  লাখ লাখ টাকা নিজেই আত্মসাত করেছেন। একসঙ্গে ৬০ লাখ টাকা প্রকল্পের কাজ না করেই তিনি সম্পূর্ণ টাকা নিজের পকেটে ভরেছেন। এটা গুরুতর অপরাধ ও প্রতারণা।

ঘিওর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম বলেন, কাজ কিছু শেষ করা হয়েছে এবং কিছু কাজ চলমান রয়েছে। ক্ষুদ্র হস্তশিল্প প্রশিক্ষণের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন আমরা ক্ষুদ্র হস্তশিল্প যুবকদের স্বাবলম্বী করতে অনেক কাজ করেছি। আপনাকে এসব তথ্য দেয় কারা। মশা নিধন যন্ত্রপাতি কেনাকাটা হয়েছে কি’না এবিষয়ে জানত চাইলে তিনি বলেন আপনি উপজেলা ইঞ্জিনিয়ারকে জিজ্ঞেস করেন। কেনাকাটা না করা হলে সরকারি টাকা ফেরত দেয়া হবে।

ঘিওর উপজেলা প্রকৌশলী আশরাফুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, মশা নিধনের কোন যন্ত্রপাতি এখনো কেনা হয়নি। বিতরণ হবে কিভাবে। আর উপজেলা অভ্যন্তরীণ বাসাবাড়ি ও রাস্তা মেরামত প্রকল্পের টাকা ইউএনওর নামে বিল পে-অর্ডার করে রাখা হয়েছে। এরমানে বিল উত্তোলন দেখানো হয়েছে। কিন্ত কোন কাজ তো করা হয়নি। অথচ দেখানো হয়েছে কাজ সম্পূর্ণ করা হয়েছে।