সিংগাইর সংবাদদাতা:
থানা শ্রমিক লীগ নেতা মো. হায়দার ইসলামের নদী দখলের সংবাদ পত্রিকায় প্রকাশ করায় সাংবাদিকের বিরুদ্ধে একটি মিথ্যে চাঁদাবাজি মামলা করা হয়। মামলার বাদি শ্রমিকলীগ নেতা হায়দার ইসলাম সিংগাইর উপজেলার চর আজিমপুর গ্রামের জিন্নত আলীর ছেলে।
গত ২৫ ফেব্রুয়ারি হায়দারের নদী দখলের সংবাদটি বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে ছাপা হলেও সিংগাইর উপজেলা দৈনিক ইত্তেফাকের সংবাদদাতা মানবেন্দ্র চক্রবর্ত্তীকে আসামি করে ৭ র্মাচ মানিকগঞ্জ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এ মামলাটি করেন সে। এছাড়াও মামলায় আসামি করা হয় প্রতিবাদি ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদেও। মামলায় স্বাক্ষী করা হয়েছে হায়দার বাহিনীর নদী দখলের সাথে জড়িতদের দিয়ে। এছাড়া নিজের অপকর্ম ঢাকতে ১৩ এপ্রিল পুলিশ সুপার বরাবরও একটি মিথ্যে লিখিত অভিযোগও দিয়েছে হাইব্রিড এই নেতা।
’’সিংগাইরে নদী ভরাট করতে গিয়ে পিছু হটলেন শ্রমিক লীগ নেতা’’ বিক্ষুদ্ধ জনতার প্রতিবাদ’’ শিরোনামে গত ২৫ ফেব্রুয়ারি দৈনিক ইত্তেফাকে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। সরোজমিনে ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের বক্তব্য এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে এ সংবাদটি হয়। সংবাদে উল্লেখ করা হয় বিক্ষুদ্ধ জনতার প্রতিবাদের মুখে ধলেশ্বরী নদীর মাঝখানে ভরাট করে বালুর ট্রাক চলাচলের রাস্তা করতে গিয়ে পিছু হটলেন উপজেলা শ্রমিক লীগের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক মো. হায়দার ইসলাম। সিংগাইর পৌরসভার কাশিমনগর ধলেশ্বরী নদীর খেয়াঘাটে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি এ ঘটনা ঘটে। এ সময় হায়দার বাহিনীর বিরুদ্ধে অবস্থান নেয় ঐ গ্রামের ক্ষতিগ্রস্থ শত শত নারী-পুরুষ। ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে হায়দার তার বাহিনী নিয়ে বালু ব্যবসার সুবিধার্থে জোর করেই খনন যন্ত্র দিয়ে নদী ভরাট করতে থাকেন। এ সময় ভেকু দিয়ে ভেঙ্গে ফেলা হয় নদী পারাপারের সুবিধার্থে গ্রামবাসীর কয়েক লাখ টাকার ব্যায়ে তৈরি বাঁশের সেতুটিও।
নদী খননের নাম করে কৃষকের সর্বনাশসহ ফসলি জমি,বাড়িঘর ভেঙ্গে গেছে।এমনকি মসজিদ,কবরস্থানের জায়গার মাটিও কেটে নিয়েছে সে। সেখানে বাড়ি ঘর দেবে যাচ্ছে। ধলেশ্বরী নদী খনন শেষ হয়েছে অনেক আগেই।এরপরেও ঠিকাদার হায়দার ইসলাম নিয়ম বহির্ভূতভাবে খননের শিডিউল না মেনে শুধু বালু ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। পানি প্রবাহের জন্য নদী খননের কাজ হাতে নিলেও এখানে সরকারের অর্থ অপচয় ছাড়া কিছুই হয়নি। এছাড়া ড্রাম্প ট্রাক দিয়ে বালু সরবরাহের ফলে গ্রামীণ সড়কেরও ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হচ্ছে। এখন নদী ডাইভার্সন হলে পানিপ্রবাহ বিঘ্নিত হবে এবং কৃষি কাজ ব্যাহত হবে।সরকারের সব টাকা বেহাত হলেও লাভবান হয়েছে হায়দার।
ঐ দিনের ঘটনায় তার বিরুদ্ধে উর্ধতন কতৃপক্ষকে রির্পোট দিয়েছেন বলে ডিএসবি সিংগাইর জোনের এসআই সবুর খান জানান। পুলিশের তথ্যমতে হায়দারের বিরুদ্ধে ২০১৪ সালের ১৪মে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে এফআই আর নং ২৪ ধামরাই থানায় একটি মামলা হয়।
পৌর মেয়র আবু নাঈম মো. বাশার বলেন, হায়দারের এক সময় সেলুন ছিল।এর পর হয় ট্রলি চালক। এখন শ্রমিক লীগ নেতা হয়ে হায়দার এন্টারপ্রাইজের মালিক। সে মাদকের সাথেও জড়িত।একটি বড় গরুর ফারর্ম, কয়েকটি ট্রাক, মাহিন্দ্র ও ভেকু ছাড়াও রয়েছে অনেক সম্পত্তি। রাতারাতি কি করে শত কোটি টাকার মালিক হলেন। সরকারকে ইনকাম ট্যাক্স ঠিকমত দেয় কিনা। অবৈধ আয়ের উৎস কি। এছাড়া তার রাজনীতি হচ্ছে ব্যবসায়ী কৌশল। এগুলো তদন্ত করা দরকার।
থানা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক শহিদুর রহমান বলেন,গরীব ঘরের ছেলে আমিই ওকে আমাদের দলে টেনে এনেছিলাম মাটির ব্যবসা করে খেতে।কিন্তু হঠাৎ করেই এখন টাকার মালিক হওয়াতে সে আমারও নির্দেশ মানছে না। সে কি করে এ মিথ্যে মামলা করতে সাহস পেল। যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক সায়েদুল ইসলাম ও পৌর যুবলীগের সভাপতি জসিম উদ্দিন খান বলেন,ওকে সব সময় বিএনপির মিছিলে দেখা যেত। এখন সে শ্রমিকলীগ নেতা। থানা শ্রমিক লীগের সভাপতি নাজমুল হোসেন জামাল বলেন, আমরা তার দায় দায়িত্ব নেব না। তাকে কেউ পছন্দ করে না। সে আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই।
আজিমপুরের মফিজুল ইসলাম বাদশা বলেন, নদীর মাটি বিক্রি করেই সে এখন ৪ টি ভেকু,৭ টি ট্রাক্টর ও ২ টি ড্রাম ট্রাকসহ অনেক কিছুর মালিক। নদী থেকে তার প্রতিদিন এক লাখ টাকা আয় হয়। পৌর আওয়ামীলীগের সভাপতি আব্দুস সালাম খান বলেন, কিছুই ছিল না তার। আমাদের দলে এসেই শত কোটি টাকার মালিক। দলে আনাটাই আমাদের ভুল হয়েছে। তার পিতা মাতাকে মারধর করতে যায় বলে আমরা সালিশ করে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছি। একই কথা বললেন, বাজার বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল বারেক খান।