আজ মহান মে দিনের ১৩৭ বছর। মানব সভত্য ও প্রগতির চাকা ঘুরাতে জীবন উৎসর্গকারী ও আত্মত্যাগী সকল শ্রমজীবি মানুষের করকমলে অতল শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা দিয়ে কবির ভাষায় বলতে চাই- ‘দুনিয়ার মজদুর এক হও’ শ্লোগানে বিপ্লবের সেই বীজমন্ত্র পৌছালো কানে কানে।
চীন, ভিয়েতনাম, কোরিয়া, কিউবা,বিশ্বের নানা দেশে রক্ত-ঝরানো শ্রমিকের পথ রুশ-বিপ্লবে মেশে। পহেলা মে’র আত্মত্যাগে শ্রমজীবী পেলো শিক্ষা শ্রমের মূল্য দিতেই হ’বে এটা নয় প্রাণ-ভিক্ষা।
ইতিহাসের পাতা থেকে (১৮৮৬ -২০২১) ১৩৫ বছর আগের কথা। শ্রমের মর্যাদা,মূল্য ও ন্যয্য মজুরিসহ যুক্তিসঙ্গত কর্মসময় নির্ধারণের আন্দোলনে শ্রমীকদের জীবনাবাসনের মাধ্যমে মে দিবসের সূচনার ১৩৫ বছর আজ। গত ১৩৫ বছররে দুনিয়ায় আমাদের মানব সমাজ ও সভ্যতার ব্যাপক পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। আমরা সচেতন মহল আজো হতাশ যে সমাজের ব্যাপক উন্নয়ন অগ্রগতি সাধিত হলেও শ্রমীকদের দৈনন্দিন জীবন মান ও স্বাস্থ্যের কতটুক উন্নয়ন হয়েছে এবং সমাজের চলমান ধারায় আদৌ কি তাদেরকে উন্নয়নের মূলধারায় আনা সম্ভব?
মহামতি কাল মার্কস ও ফ্রেডরিকস এ্যাঙ্গেলস রচিত মানবজাতির মুক্তির সংবিধান পূজি গন্থে বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমান করেছেন যে শ্রম ছারা কোন কিছুই উৎপাদন করা যায় না এবং উদ্বিত্ব শ্রমই মালিকের মুনাফার হাতিয়ার। এখন প্রশ্ন হলো কর্মঘন্টা কতক্ষণ হবে? শ্রম শক্তি বিক্রি করে যে শ্রমিক সে কি তার শ্রম সময়ের মূল্য নির্ধারণ করতে পারবে। কতক্ষণ কাজ করলে বা কি পরিমান মূল্য পেলে সে তার জীবনকে বিকশিত করার সুযোগ পাবে, বা জীবনের চাহিদা বলতে কি বুঝায়,শ্রমের কাজে নিয়োজিত পশু এবং মানুষের ভ’মিকা,মূল্য এবং মর্যাদা কিভাবে বিবেচিত হবে,জীবনের জন্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য উৎপাদন ও জীবন বিকাশের জন্য সংস্কৃতি নির্মাণে শ্রমের ভূমিকা কি। শ্রমিক কি শুধু প্রয়োজনীয় দ্রব্য উৎপাদনে শ্রম প্রদান করে নাকি সে উৎপাদিত দ্রব্যের ক্রেতাদের এক বিপুল অংশ,তাই লক্ষ কোট শ্রমিক পন্য না কিনলে তা বিক্রি হবে কিভাবে? শ্রমিকের মজুরি উৎপাদিত পণ্যের বিপননে কি ভূমিকা রাখে,ন্যায্য মজুরি আসলে কত হবে,মুনাফা আসে কোথা থেকে? মুনাফা বৃদ্ব্যিতে মালিকের তৎপরতা কত ধরনের,শ্রমিক কোন মজুরি বদ্ব্যির আন্দোলনে অংশ নিতে পারে? শ্রমিকের জীবন ও ভবিষ্যত শ্রমশক্তি তার সন্তানদের জীবন কেমন হবে? এরকম অসংখ্য প্রশ্নের ঘনিভূত রুপ হিসেবে তৎতকালিন শিল্পউন্নত আমেরিকার মাটিতে শ্রমিকদের মধ্যে প্রধান দািব উঠেছিলো ৮ ঘন্টা কর্মদিবস চাই।
এই দাবির নিরাকারনের নিরাকারন খুজতে গেলে বা গভির অন্তরালের কথা হলো ৮ঘন্টা কাজ করে এমন মজুরি চাই যেন তা দিয়ে আমরা নূন্যতম মৌলিক চাহিদার ভিত্তিতে একজন শ্রমিক তার খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চতসহ মানসম্মত জীবন যাপন করতে পারে। কিন্তু শ্রমিকদের দাবি যতই ন্যায়সঙ্গত হোক না কেন মালিকের মুনাফা ও শ্রমিককের ন্যায্য মজুরি দ্ব›দ্ব এতই তীব্র যে আলোচনার পথে নয় বরং নিষ্ঠুর দমন ও রক্তাক্ত পথে সরকার ও মালিকপক্ষ সেই আন্দোলন দমন করতে চেয়েছিলো। ১৮৮৬ সালে আমেরিকার শিকাগো শহরের হে মার্কেটের সামনে লাখ লাখ শ্রমিক সমবেত কন্ঠে দাবি তুলেছিলো সূর্য্যদয় থেকে সূর্য্যাস্ত নয়,৮ ঘন্টা কর্মদিবস চাই। মে মাসের ১-৪ তরিখ পর্যন্ত এই আন্দোলন চলতে থাকে। সরকার ও মালিকপক্ষ শ্রমিকের উপর নির্বিচারে গুলিবর্ষন করে ১০-১২ জন শ্রমিকের হত্যা করে আন্দোলনকে নিষ্ঠুরভাবে দমন করাই শুধু নয় আন্দোলনের নেতা অগাষ্ট,এঞ্চেলস,স্পাইস ও ফিসারকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে তৎতকালিন ফ্যাসিবাদী সরকার। ১লা মে এর এই দিনে শিকাগো শহরের সেই শ্রমিকের রক্তোর শিরা সারা দুনিয়ার লাখো শ্রমিকের ধমনিতে নারা দেয়ার সম্মিলিত প্রয়াসই আজকের মে দিবস বা আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস। একসময় সুকুমার ভট্টাচার্যরা কি অদম্য সাহসে কলম হাতে তুলে নিয়েছিলেন। লিখেছিলেন- হারাবার কিছু ভয় নেই শুধু শৃঙ্খল হবে হারা, জন কল্লোলে উত্তাল নদী মোহনায় দিশেহারা।
তুফানে তুফানে তুলেছে আওয়াজ সইবো না, আজন্ম কাঁধে শোষণের চাকা বইবো না, এবার লড়াই, এবার লড়াইয়ে অস্ত্র শানিয়ে দাঁড়া।ফরাসি বিপ্লবের আকাঙ্কা ও সাম্য প্রতিষ্ঠার মধ্যেই ছিলো আজকের মে দিবসের চেতনা। ১৭৮৯ সালে পৃথিবী তাই আর আগের মতো থাকেনি।মানুষ বাঁচবে কিভাবে? এই প্রশ্নের উত্তর পেতে শ্রমের ভূমিকার কথা ভাবতে হয়েছে। অর্থনীতির জনক এডহাম স্মীথ ও ডেভিড রিকার্ডো দেখালেন মানুষের শ্রমের ফলেই মূল্য তৈরী হয়। মূল্যের শ্রম তত্ত¡ স্বীকার করলো শ্রমিকের শ্রমের ভূমিকার কথা। কিন্তু তার বিনিময়ে শ্রমিক কি পাবে সে প্রশ্নের আজো সমাধান মিলেনি। গ্রাম থেকে আসা শ্রমিক কাখানায় রাতদিন গতর খাঠিয়ে কঠোর পরিশ্রম করছে। কিন্তু তার জীবনের নূন্যতম চাহিদা পুরন করতে পারছে না। অন্যদিকে মালিকদের প্রাচুর্য্য জৌলুস ও সম্পদের পরিমান বাড়ছে এবং তারা আরো অধিক মুনাফার লোভে শোষকে পরিনত হচ্ছে। অন্যদিকে শোষিত শ্রেণীর মেহনতি শ্রমিক ও মালিকের দ্বন্দ¦ ও সংঘাতে সম্পদের অভেদ বৈষম্য তাদের মধ্যে বিক্ষোভের জন্ম দিলে তারা কঠোর আন্দোলন সংগ্রাম করে এবং ১৮৭১ সালে প্যারি কমিউন প্রতিষ্ঠা করে রাষ্ট্র গঠনের চেষ্টা করেছিলো শ্রমিকরা। মাত্র ৭২ দিনের প্যারি কমিউনের পরাজয়ে সাময়িক থমকে দাড়ালেও শ্রমিকের সমস্য যেহেতু সমাধান হয়নি তাই আন্দোলন ছরিয়ে পরে দেশে দেশে এ রকম বহু আন্দোলন আর পরাজয়ের মধ্যে দিয়েই অন্তত কাগজে কলমে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে ৮ ঘন্টা কর্মদিবসের আন্দোলন। ১৮৮৯ সালে ফরাসি বিপ্লবের শতবর্ষ উপলক্ষে প্যারিসে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক শ্রমিক সম্মেলনে মহামতি কার্ল মার্কস এর আদর্শিক বন্ধু ফেডরিক এ্যাঙ্গেলস এর উপস্থিতিতে ১ মে আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস পালনের সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়। পরবর্তীতে ১৯১৯ সালে আইএলও প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর সার বিশে^ মে দিবস পালিত হয়ে আসছে। পরিতাপের কথা হলো যে দেশে মে দিবসের সূচনা সেই সাম্্রাজ্যবাদি আমেরিকা এখনো রাষ্টীয়ভাবে মে দিবস পালন করেন না।তারপরও বিশে^র প্রায় ৮০টি দেশে মে দিবসে সরকরি ছুট ঘোষনাসহ যথাযোগ্য মর্যাদাসহ মে দিবস পালন করেন।
মে দিবস ও বাংলাদেশের শ্রমিকের কথা: স্বাধীনতার পর তথা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেক মুজিবুর রহমান সরকার মে দিবসকে সরকারি ছুটির দিন ঘোষনা করেন এবং সেটি অদ্যবধি চলমান। মার্কসীয় অর্থনীতিতে যে প্রলেতারিয়েত বা সর্বহারা শ্রমিকের কথা বলা হয়েছে সেটি বর্তমান বাস্তাবতায় আর প্রয়োগযোগ্য নয় বললেই চলে। কারখানা শ্রমিক,পরিবহন শ্রমিক,আকাশ শ্রমিক,প্রযুক্তি শ্রমিক ও বুদ্ব্যিভিত্তিক শ্রমিকসহ শ্রমিক শ্রেণীর মধ্যে রয়েছে নানা শ্রেণী বিন্যাস। কারখানা শ্রমিকের রক্তে ৮ ঘন্টা কর্মদিবস আদায় হলেও সেটি ২২ লাখ সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ক্ষেত্রে বাস্তবায়িত হচ্ছে। এদেশের কোটি কোটি শ্রমিক এখনো ৮ ঘন্টা কর্মদিবসের সুফল পায় না। বরং অভার টাইমের নাম দিয়ে শ্রম আইনে কৌশলে ১০-১২ ঘন্টা কাজের ব্যাবস্থা করা হয়েছে। নি¤œ মজুরির ফাঁদে শ্রমজীবি মানুষকে এমনভাবে আটকে ফেলা হয়েছে যে শ্রমিকরা এখন বাধ্য হয় অভারটাইম করতে। এটি না করলে তার সংসারও চলবে না এবং চাকরিও চলে যাবে। মহামতি কার্ল মার্কস হিসাব করে দেখিয়েছিলেন যে মালিকের মুনাফা বাড়ানোর পথ দুটি। শ্রমিকের শ্রম সময় বাড়ানো আর যন্ত্রের ব্যাবহার বাড়ানো। ফলে কর্মঘন্টা বাড়ছে, উৎপাদন বাড়ছে। ২৪ ঘন্টার দিনকে ৮ ঘন্টা করে তিনটি সিডিউল করার কথা থাকলেও মালিকপক্ষ দুটি সিডিউল করে আর বাকি আট ঘন্টা দুই সিডিউল থেকে অভারটাইম দিয়ে পুষিয়ে নেয়। মালিকে শ্রমিক নিয়োগ না দিয়েই মুনাফা হলো আর শ্রমিক পানির দামে অতিরিক্ত শ্রম দিয়ে শোষিত হলো এবং হচ্ছে। ফলে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে বেকারত্ব। বিপুল সংখ্যক শ্রমিক শ্রম বাজরে মজুত আছে বলেই মারিকপক্ষ কম মজুরিতে কাজ করাতে পারছে এবং ইদের আগে বেতন বোনাস বন্ধ ও কাথায় কথায় ছাটাই বানিজ্য অব্যাহত গতিতে চলছে। এর সাথে পাল্লা দিয়ে চলছে শ্রমিক দুর্ঘটনা,গার্মেন্ট শিল্পে অগ্নিকান্ড,ছাদ ধসে পড়া ইত্যাদি কারনে প্রতি বছর অসংখ্য শ্রমিকের নির্মম জীবনাবাসনে তাদের পরিবারের নিদারুন কষ্ট পোহাতে হয়। ২০১৩ সালের ২৬ এপ্রিল রানা প্লাজা ধসে কয়েক হাজার শ্রমিকের নির্মম মৃত্যুর দাগ না শুকাতেই তাজরিন ফ্যাশনে অগ্নিকান্ড,পুরান ঢাকায় বয়লার কারখানাসহ এবছর বঙ্গবাজার,নিউমার্কেট,উত্তরায় ব্যবসায়িক শপিং মলের শ্রমিকদের গতরেও লেলিহান আগুনের শিখা। অসংখ্য মিল কারখানায় অগ্নিকান্ডের ঘটনায় মানুষের মৃত্যুতে ফ্যাসিষ্ট শাসক একটি তদন্ত কমিটি ছারা আর কিছুই করতে পারে না এবং ইসু দিয়ে ইসু হত্যা করে ্এগুলোকে চাপা দিয়ে রাখা হয়। শ্রমিকের এই চাপা কষ্ট ও অসন্তেষ মাঝে মাঝে বিক্ষোভে রুপ নিলে শাসকমহল নানা কায়দা কৌশল ও প্রলোভনে সেটিকে দমন করে টিকে আছে।
প্রতি বছর শ্রমবাজারে কাজ প্রত্যাশি ২২/২৫ লাখ তরুণ যুবক আসে যাদের মাত্র দুই লাখের মতো কর্মসংস্থান রাষ্ট্র করতে পারে। তারপর সাধরন পরিসংখ্যানে বলে প্রতি বছর ৮-১০ লাখ মানুষ বিদেশে পারি জমাতে ধর্না দেয়। আর বাকিরা দেশের ভিতর নানাভাবে মাথাগুজে টিকে থাকার লড়াই করে। দেশে ৮ কেটি ৩৪ লাখ শ্রমজীবি মানুষের মধ্যে প্রায় ৩ কেটি কাজ করে কৃষি খাতে এখানেও আবার মৌসুমী বেকারত্ব রয়েছে। এর বাইরে ৪০ লাখ শ্রমিক গার্মেন্টেসে,৩০ লাখের বেশি নির্মাণ খাতে,৫০ লাখ পরিবহন খাতে ,১০ লাখের বেশি দোকান কর্মচারি; চা,চামরা,পাট,তামাক,তাত, রি রোলিং,মোটর মেকানিক,সংবাদ মাধ্যম,হাসপাতাল,ক্লিনিক,পুস্তক বাধাই, হকার রিকসা,ইজি বাইক ও ভ্যান চালক সিকিউরিটি গার্ডসহ বিভিন্ন খাতে কাজ করছে।
শ্রম শক্তির ১ কোটি ২ লাখ প্রাতিষ্ঠানিক খাতে আর বাকিরা অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কাজ করে থাকে। মজুরী বের্ডের মাধ্য ৪৩ টি সেক্টরোর শ্রমজীবিদের নি¤œতম মজুরি নির্ধারনের ব্যাবস্থা থাকলেও বাকি কোটি কোটি শ্রমিকের কাজ নাই তো মজুরি নাই নীতিতে কাজ করানো হয়ে থাকে। কারখানায় ট্রেড ইউনিয়ন তো দূরের কথা শ্রমিকদের সংগঠিত হওয়ার ক্ষেত্রে আইনগত ও আইনের বাইরেও অসংখ্য বাধা রয়েছে। দেশে দুই লাখের মতো ছোট বড় ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প থাকলেও মাত্র ৮ হাজারের কম রয়েছে ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র। দেশের প্রধান রপ্তানি খাতে গার্মেন্সে ৪ হাজারের বেশি কারখানা থাকলেও ট্রেড ইউনিয়ন আছে এমন কারখানা কাগজে কলমে মাত্র ৬৬১ টি। বাস্তাবে সক্রিয় ট্রেড ইউনিয়নের সংখ্যা আরো কম। বর্তমান মালিকবান্ধব শ্রমিক মারার শ্রম আইনে ট্রেড ইউনিয়ন করার স্বাধীনতা নেই। দেশে ৮টি ইপিজেটে ট্রেড ইউনিয়ন করার সুযোগ ও অধিকার নেই। আইএলও কনভেনশনের ৮৭ ও ৯৮ অনুচ্ছেদ বাংলাদেশের ১৯৭২ সালের বঙ্গবন্ধু সরকার অনুসমর্থন করলেও পরবর্তী স্বৈরাচারি সামরিক সরকার থেকে বর্তমান সরকারের আমলেও স্বাধীনভাবে ট্রেড ইউনিয়ন করা ও পছন্দমত নেতা নির্বাচনের অধিকার থেকে শ্রমিকরা ভয়ঙ্করভাবে বঞ্চিত। দীর্ঘদিন ধরে ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের নেতারা শ্রমিকদের জন্য সর্বনি¤œ মজুরি ১৬ হাজার টাকার নির্ধারনের আন্দোলন করে আসছে। আন্দোলনের এক পর্যায়ে সরকার ৮ হাজার টাকা নুন্যতম মজুরি নির্ধারন করে এর সাথে নানা সুযোগ সুবিধার প্রলোভন দেখিয়ে শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার আদায়ের আন্দোলনে আপাতত পানি ঢেলে স্তমিত করায় সরকার বাহাদুর বেশ সচেষ্ট। আজকের মে দিবসে স্লোগানে শ্রমিকদের মুখে মজুরির অসম বন্টন ও সর্বস্তরে বৈষম্যের কথাই তাদের মুখে ফুটে উঠছে। কবির ভাষায় বলতে হয়- লড়তে যখন হবেই তবে ঘুমিয়ে কেন আজো,বাঁচতে যখন হবেই তখন কাফনে কেন সাজো,জাগো এইবার, হও দুর্বার, বজ্রের মতো বাজো। সারাটি জীবন কলুর বলদ থাকবো না,মালিকের ধন আর বাড়াবো না বাড়াবো না,আমাদের শ্রম শোষণ করতে দেবো না- না,(আমরা) বিপুল বিশ্বে নিঃস্বের মত বাঁচবো না।
মুনাফা ও মজুরির যে চিরায়ত বিরোধ,দ্বন্দ¦ ও সংঘাত দিনে দিনে ঘনিভূত হয়ে শ্রমিকরা সংখ্যাগরিষ্ট হলেও তারা দুর্বল ও শোষিতই থেকে যাচ্ছে। এদিকে বৈশি^ক মহামারী করোনাকালীন সংকট উত্তরণের সাথে সাথেই সাম্্রাজ্যবাদীদেও নতুন খেলা ইক্রেণ-রাশিয়া যুদ্ধ। এই যুদ্ধে দ্রব্যমূল্য আকাশচুম্বি হলেও কারো যায আসেনা তবে চরম সংকটে আছে দুনিয়ার আপামর মেহনতি শ্রমিক পক্ষ। সারা দুনিয়াতে খাদ্য পন্য ও ব্যাবহারিক পন্য উৎপাদনে সকল রেকর্ড ভেঙ্গে ফেললেও তা সাধারন মানুষের নাগালের বাইরে থেকে যাচ্ছে।
আয়ের বড় অংশ খাদ্য নিরাপত্তায় যেমন-খাদ্য,বাড়ি ভাড়া,পোশাক ও চিকিৎসা ব্যয়ে চলে যাওয়ায় সঞ্চয় যেমন নাগালের বাইরে এবং দক্ষতা বৃদ্ব্যির জন্য ভালো শ্রমিক হয়ে ওঠাও সম্ভব হচ্ছে না। উৎপাদন ও বেকারত্ব বৃদ্ব্যির এই দুষ্টচক্রে একসময় সামাজিক সকল শৃঙ্খলাকেই ভেঙ্গে ফেলবে। উৎপাদন বন্টন ও ভোগের ক্ষেত্রে ভারসাম্য আনা ও আগ্রাসী পূজিবাদের হাত থেকে দেশ ও সমাজকে রক্ষা করতে হলে প্রকৃতপক্ষে ৮ ঘন্টা কর্মদিবস,যোগ্যতা অনুয়ায়ী কাজ ও কাজ অনুযায়ী মজুরি প্রদানের কোন বিকল্প নেই। আসুন শ্রমিকদের শ্রম ঘাম ও রক্তদানের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে তাদের ন্যায্য অধিকার আদায়ে দাবির স্বপক্ষে আন্দোলন করি ও আন্দোলনকে বেগবান এবং সংগঠিত করতে প্রত্যেক্ষ ও পরোক্ষভাবে নিজেকে নিয়োজিত রাখি।
সমাজের সচেতন মহলের ক্ষুদ্র একটি অংশও যদি বুকে সাহস ও ভরসা নিয়ে শ্রমিক মেহনতি মানুষের জন্য মুক্ত মানবের মুক্ত সমাজের লড়াই অব্যাহত রাখে তাহলে আমরা কবি কাজী নজরুল ইসলামের সাথে সুর মিলিয়ে বলতে চাই- জাগো অনশন-বন্দী, ওঠ রে যত,জগতের লাঞ্ছিত ভাগ্যহত! যত অত্যাচারে আজি বজ্র হানি’,হাঁকে নিপীড়িত-জন-মন-মথিত বাণী, নব জনম লভি’ অভিনব ধরণী,ওরে ঐ আগত। আদি শৃঙ্খল সনাতন শাস্ত্র-আচার,মূল সর্বনাশের, এরে ভাঙিব এবার! ভেদি’ দৈত-কারা, আয় সর্বহারা! কেহ রহিবে না আর পর পদ-আনত।
লেখক: মো.নজরুল ইসলাম
সাধারণ সম্পাদক বাংলাদেশ প্রগতি লেখক সংঘ, মানিকগঞ্জ