০৫:১০ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১২ ডিসেম্বর ২০২৩

হারিয়ে যাচ্ছে দেশজ বাদ্য যন্ত্র তৈরীর কারিগর

আসাদুজ্জামান আসাদ, মানিকগঞ্জ:

আগডুম বাগডুম ঘোড়ারডুম বাজে ঢাক ঢোল ঝাঝর বাজে। বাঙালির ঐতিহ্য ঢোল, ঢোলের নান্দনিক ব্যবহার স্মৃতির অতলে যাওয়ার উপক্রম।

বাঙ্গালীর ভোর শুরু হতো, সুর ও বাদ্য যন্ত্রের তালে। সে সুর আর গান এখন মিলিয়ে যাচ্ছে যান্ত্রিক জীবনের কোলাহলে। ঢাক-ঢোলের শব্দের যে সুরের মূর্ছনা সৃষ্টি করে তা বাঙ্গালীর একান্ত নিজের সুর। সেই লালিত সুরে পড়েছে নেতিবাচক ছায়া। অবশ্য সংস্কৃতি পরিবর্তনশীল এবং প্রবাহমান। ফলে নতুন বাদ্য যন্ত্র স্থান করে নেবে পুরাতনের যায়গায় এটাই স্বাভাবিক।

ঢাক-ঢোল মিশ্রিত সঙ্গীতের জন্য হৃদয় ব্যাকুল হলেও একদিন সত্যিই বিলীন হয়ে যাবে দেশীয় বাদ্য যন্ত্রের সুর। বংশ পরম্পরায় আবহমান গ্রাম বাংলায় লোকজ জ্ঞানে ও সৃজনশীলতায় কারিগররা তাদের নিজস্ব অভিজ্ঞতা ব্যবহার করে তৈরী করে চলেছে নানান বাদ্য যন্ত্র। তাদের নেই কোন উন্নত প্রযুক্তি, আধুনিক প্রশিক্ষণ, সরকারি কোন পৃষ্ঠপোষকতা। তবুও পাল্লা দিয়ে আধুনিক যন্ত্রপাতি খচিত বাদ্য যন্ত্রের সাথে কোনরকমে টিকে আছে।

বর্তমানে নানা দূর্যোগ যেমন করোনা কালীন দূর্যোগ, এসব দেশীয় বাদ্য যন্ত্রের গুণী বাদকের অভাব এ শিল্পটাকে বিলীনের পথে নিয়ে যাচ্ছে। তেমনি বাদ্যকারদের সঙ্গে সঙ্গে বাদ্য যন্ত্র তৈরীর কারিগররা হারিয়ে যাচ্ছে।

বিচিত্র পেশার ভীড়ে দেশজ বাদ্য যন্ত্র তৈরীর পেশায় অর্থের প্রাচুর্যতা নেই। সংসার নামক যন্ত্রটা আর চলে না। বংশানুক্রমে এ পেশা পরিবর্তন করে নতুন পথের দিকে আজকের প্রজন্ম। ফলে হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের বাঙালির ঐতিহ্য।

মানিকগঞ্জের ধানকোড়ার উত্তর খল্লী গ্রামের দুই ভাই গোপাল চন্দ্র মনিদাস ও মঙ্গল চন্দ্র মনিদাস ধরে রেখেছেন বংশ পরম্পরার এ পেশা। দীর্ঘ কয়েক যুগ ধরে বুণে চলছেন বাঙালির হৃদয়ের সেই সুরের বাদ্য যন্ত্র তৈরীর কাজ। আরও অনেক সঙ্গী ছিল তাদের এই কাজের। পরিবর্তনের সাথে সাথে দুইজনই ধরে রেখেছেন এ পেশা। তাদের পরবর্তীতে পরিবারে আর কেউ আসবে না এ পেশায়। গোপাল চন্দ্র মনিদাস জানান করোণাকালীন সময়ে বাদ্যকাররা অন্য পেশায় চলে যাওয়ায় আর আধুনিক বাদ্য যন্ত্রের ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় আগের ঢাক-ঢোলের চাহিদা কমে গেছে। ভাল মানের বাদ্যকারও এখন নেই। যেহেতু বাদ্যকার কমে গেছে বাদ্য যন্ত্রের চাহিদাও নাই। বাদ্য যন্ত্রের চাহিদা কমে যাওয়ায় তাদের কদর কমে গেছে। বাপ দাদার পেশা আর নেশার কারনে ধরে রেখেছেন বাদ্য যন্ত্র তৈরীর এ পেশাটিকে।

গোপাল আর মঙ্গল মণিদাস টিকিয়ে রেখেছেন দেশীয় বাদ্য যন্ত্র তৈরীর বাঙালির এ ঐতিহ্যকে। তাদের পর হয়তো বিলীন হয়ে যাবে এ পেশাটি।

কালীগঞ্জে অবহেলিত রাস্তা, ভোগান্তিতে এলাকাবাসী

হারিয়ে যাচ্ছে দেশজ বাদ্য যন্ত্র তৈরীর কারিগর

প্রকাশ : ১২:৪৮:০৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১২ মে ২০২৩

আসাদুজ্জামান আসাদ, মানিকগঞ্জ:

আগডুম বাগডুম ঘোড়ারডুম বাজে ঢাক ঢোল ঝাঝর বাজে। বাঙালির ঐতিহ্য ঢোল, ঢোলের নান্দনিক ব্যবহার স্মৃতির অতলে যাওয়ার উপক্রম।

বাঙ্গালীর ভোর শুরু হতো, সুর ও বাদ্য যন্ত্রের তালে। সে সুর আর গান এখন মিলিয়ে যাচ্ছে যান্ত্রিক জীবনের কোলাহলে। ঢাক-ঢোলের শব্দের যে সুরের মূর্ছনা সৃষ্টি করে তা বাঙ্গালীর একান্ত নিজের সুর। সেই লালিত সুরে পড়েছে নেতিবাচক ছায়া। অবশ্য সংস্কৃতি পরিবর্তনশীল এবং প্রবাহমান। ফলে নতুন বাদ্য যন্ত্র স্থান করে নেবে পুরাতনের যায়গায় এটাই স্বাভাবিক।

ঢাক-ঢোল মিশ্রিত সঙ্গীতের জন্য হৃদয় ব্যাকুল হলেও একদিন সত্যিই বিলীন হয়ে যাবে দেশীয় বাদ্য যন্ত্রের সুর। বংশ পরম্পরায় আবহমান গ্রাম বাংলায় লোকজ জ্ঞানে ও সৃজনশীলতায় কারিগররা তাদের নিজস্ব অভিজ্ঞতা ব্যবহার করে তৈরী করে চলেছে নানান বাদ্য যন্ত্র। তাদের নেই কোন উন্নত প্রযুক্তি, আধুনিক প্রশিক্ষণ, সরকারি কোন পৃষ্ঠপোষকতা। তবুও পাল্লা দিয়ে আধুনিক যন্ত্রপাতি খচিত বাদ্য যন্ত্রের সাথে কোনরকমে টিকে আছে।

বর্তমানে নানা দূর্যোগ যেমন করোনা কালীন দূর্যোগ, এসব দেশীয় বাদ্য যন্ত্রের গুণী বাদকের অভাব এ শিল্পটাকে বিলীনের পথে নিয়ে যাচ্ছে। তেমনি বাদ্যকারদের সঙ্গে সঙ্গে বাদ্য যন্ত্র তৈরীর কারিগররা হারিয়ে যাচ্ছে।

বিচিত্র পেশার ভীড়ে দেশজ বাদ্য যন্ত্র তৈরীর পেশায় অর্থের প্রাচুর্যতা নেই। সংসার নামক যন্ত্রটা আর চলে না। বংশানুক্রমে এ পেশা পরিবর্তন করে নতুন পথের দিকে আজকের প্রজন্ম। ফলে হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের বাঙালির ঐতিহ্য।

মানিকগঞ্জের ধানকোড়ার উত্তর খল্লী গ্রামের দুই ভাই গোপাল চন্দ্র মনিদাস ও মঙ্গল চন্দ্র মনিদাস ধরে রেখেছেন বংশ পরম্পরার এ পেশা। দীর্ঘ কয়েক যুগ ধরে বুণে চলছেন বাঙালির হৃদয়ের সেই সুরের বাদ্য যন্ত্র তৈরীর কাজ। আরও অনেক সঙ্গী ছিল তাদের এই কাজের। পরিবর্তনের সাথে সাথে দুইজনই ধরে রেখেছেন এ পেশা। তাদের পরবর্তীতে পরিবারে আর কেউ আসবে না এ পেশায়। গোপাল চন্দ্র মনিদাস জানান করোণাকালীন সময়ে বাদ্যকাররা অন্য পেশায় চলে যাওয়ায় আর আধুনিক বাদ্য যন্ত্রের ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় আগের ঢাক-ঢোলের চাহিদা কমে গেছে। ভাল মানের বাদ্যকারও এখন নেই। যেহেতু বাদ্যকার কমে গেছে বাদ্য যন্ত্রের চাহিদাও নাই। বাদ্য যন্ত্রের চাহিদা কমে যাওয়ায় তাদের কদর কমে গেছে। বাপ দাদার পেশা আর নেশার কারনে ধরে রেখেছেন বাদ্য যন্ত্র তৈরীর এ পেশাটিকে।

গোপাল আর মঙ্গল মণিদাস টিকিয়ে রেখেছেন দেশীয় বাদ্য যন্ত্র তৈরীর বাঙালির এ ঐতিহ্যকে। তাদের পর হয়তো বিলীন হয়ে যাবে এ পেশাটি।