শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ০৫:২৬ পূর্বাহ্ন
বিজ্ঞপ্তি:
অনলাইন নিউজ পোর্টাল “আজকের তরুণকণ্ঠে” জেলা, উপজেলা, বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ পর্যায়ে সাংবাদিক/প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে। আগ্রহীরা  ইমেইলে (newstarunkantho@gmail.com) জীবন বৃত্তান্তসহ পাসপোর্ট সাইজের ছবি ও জাতীয় পরিচয় পত্র সংযুক্ত করে পাঠাতে পারেন।

বান্দরবানে ফিল্মি স্টাইলে ভয়াবহ হামলা; অস্ত্র-টাকা লুট; ব্যাংক ম্যানেজারকে অপহরণ

তরুণকণ্ঠ ডেস্ক
প্রকাশ : বুধবার, ৩ এপ্রিল, ২০২৪, ৯:৩০ অপরাহ্ন
বান্দরবানে ফিল্মি স্টাইলে ভয়াবহ হামলা

আবুবকর ছিদ্দীক, বান্দরবান:

বান্দরবানের রুমায় পরিকল্পিতভাবে পুরো এলাকায় বিদ্যুৎ বন্ধ করে ব্যাংক ডাকাতির মিশনে নামে সন্ত্রাসী বাহিনী কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ)। দুর্ধর্ষ কায়দায় প্রায় একশত জনের দল সোনালী ব্যাংক ঘেরাও করে হামলা চালায়। পরে টাকা লুটসহ ম্যানেজারকে অপহরণ করে নিয়ে যায় তারা। তবে কত টাকা লুট হয়েছে তা এখনও জানা যায়নি।

কেউ যেন চিনতে না পারেন সেজন্য সবাই মুখে কালি মেখে পুরো উপজেলা পরিষদ এলাকা ঘিরে ফেলে। এরপর মসজিদ থেকে তারাবির নামাজ আদায় করতে যাওয়া ব্যাংক ম্যানেজারকে ধরে নিয়ে ব্যাংকের ভল্ট খোলার চেষ্টা করে।

বেশ কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী ও রুমা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও ভারপ্রাপ্ত) মো. দিদারুল আলম এসব তথ্য জানিয়েছেন। তারা জানান, শ খানেকের মতো সন্ত্রাসী মুখে কালি লাগিয়ে অনেকটা কমান্ডো স্টাইলে পুরো উপজেলা পরিষদ এলাকা ঘেরাও করে। তখন তারাবির নামাজ আদায়ের জন্য অধিকাংশ মানুষই মসজিদে ছিলেন। সন্ত্রাসী সেখানে গিয়ে সোনালী ব্যাংকের ম্যানেজারকে খুঁজে না পেয়ে আনসার সদস্যদের মারধর করে নিয়ে যায়। পরে তাদের মাধ্যমে ম্যানেজারকে শনাক্ত করে তাকে নিয়ে ব্যাংকের ভল্ট খুলতে যায়। রাতে পুরো উপজেলা পরিষদ এলাকা প্রায় এক ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রেখেছিল তারা।

দেড় ঘণ্টার জন্য বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় বান্দরবানের রুমা এলাকার বিদ্যুৎ সংযোগ। ফিল্মি কায়দায় এই সময়ে রীতিমতো তাণ্ডব চালায় উপজেলার সন্ত্রাসী গোষ্ঠী কেএনএফ এর ৮০ থেকে ১০০জন।

সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার আধা ঘণ্টা পরই সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সদস্যরা ঘেরাও করে সোনালী ব্যাংকের রুমা শাখা কার্যালয়। সেখান থেকে লুট করে নিয়ে যায় পুলিশ ও আনসার সদস্যদের ১৪টি অস্ত্র।

ব্যাংক কর্মকর্তাদের ধারণা, ভল্ট থেকে টাকা লুট করেছে সন্ত্রাসীরা। আর কী পরিমাণ অর্থ লুট হয়েছে এ বিষয়ে নিশ্চিত করে কিছু বলা যাচ্ছে বলে জানান জেলা প্রশাসক শাহ মুজাহিদ উদ্দিন।

তিনি বলেন, ‘ভল্টে আমরা চাবি লাগানো অবস্থায় দেখেছি। কিন্তু এখনও সেটি আমরা ধরিনি। আইনি প্রক্রিয়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত এতে হাত দেয়াটা আমরা সমিচীন মনে করছি না।’

রুমা শাখার সোনালী ব্যাংকের ক্যাশিয়ার উথোয়াইচিং মারমা বলেন, গতকালের ঘটনার আগে ডরমেটরির বাইরে যুবউন্নয়ন অফিসের পাশে গিয়ে চায়ের দোকানে চা খাইতে যাই। এ সময় মুখে কালি লাগানো অপরিচিত তিনজন অস্ত্রের মুখে তার কাছ থেকে ১৫ শ টাকা ও ব্যাংকের চাবি নিয়ে নেয়। এরপর পুলিশ ও সেনাবাহিনী আসার পর ব্যাংকে এসে দেখে সবকিছু ভাঙচুর করা হয়েছে।

উথোয়াইচিং মারমার ধারনা ভল্টের ভেতরে এক কোটি ৫৯ লাখ টাকা জমা ছিল। তিনি বলেন যেহেতু চাবি দুটি। তার মধ্যে ম্যানেজারের কাছে একটি থাকে। আর তার কাছে একটি চাবি থাকে। তাই দুটি চাবি না হলে ভল্টের টাকা নেওয়া যাবে না। সেজন্য তিনি আশা করছেন টাকাগুলো সন্ত্রাসীরা হয়তো নিয়ে যেতে পারেনি।

ঘটনার পর পুরো রুমা উপজেলায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সেনাবাহিনী কঠোর নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নিয়েছে।

নিরাপত্তার কারণে বান্দরবানের সব ব্যাংকে লেনদেন স্থগিত করা হয়েছে। বুধবার (৩ এপ্রিল) দুপুরে জেলার ব্যাংকগুলো এই সিদ্ধান্ত নেয়।

আজ দুপুরে থানচি উপজেলায় সোনালী ও কৃষি ব্যাংকে ডাকাতির চেষ্টা করে নতুন সশস্ত্র গোষ্ঠী কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ)। এ সময় বাজার ঘেরাও করে কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুঁড়ে তারা।

বুধবার বেলা ১টার দিকে এই ডাকাতির চেষ্টা হয় বলে জানান সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আফজাল করিম।

এদিকে ব্যাংক ডাকাতির ঘটনায় সশস্ত্র গোষ্ঠী কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। এসময় তিনি বলেন, ‘প্রয়োজনে সেখানে সেনা মোতায়েন করা হবে।’

এদিকে ব্যাংক ডাকাতির ঘটনার পর বুধবার (৩ এপ্রিল) সকালে সোনালী ব্যাংক পরিদর্শন করেছেন জেলা প্রশাসক শাহ্ মোজাহিদ উদ্দিন ও পুলিশ সুপার সৈকত শাহিন।

এ সময় জেলা প্রশাসক সাংবাদিকদের বলেন, সোনালী ব্যাংকের ঘটনা সম্পর্কে প্রাথমিক পর্যবেক্ষণ করেছেন তারা। ব্যাংকের ভল্ট চেক করার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ক্রাইমসিন টিম এলেই বোঝা যাবে টাকা খোয়া গেছে কি না? ব্যাংক ম্যানেজারকে উদ্ধার করার জন্য পুলিশ, র‌্যাব, সেনাবাহিনীর অভিযান অব্যাহত আছে।

এদিকে অপহৃত অস্ত্র ও ব্যাংক ম্যানেজারকে উদ্ধারে অভিযান চলমান আছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। তদন্তের পর টাকা লুট হয়েছে কি না তা জানা যাবে বলে জানান পুলিশের কর্মকর্তারা।

পুলিশ সুপার সৈকত শাহিন বলেন, পুলিশের ৮টি চায়না রাইফেল, ২টি এসএমজিসহ ১০টি অস্ত্র এবং ৩৮০ রাউন্ড গুলি, আনসারের ৪টা শর্টগান, ৩৫ রাউন্ড গুলিসহ ১৪টি অস্ত্র লুট করেছে সন্ত্রাসীরা। তবে কে বা কারা এমন কাজ করেছে ক্রাইমসিনের সদস্যরা ফিঙ্গার প্রিন্ট নিয়ে তদন্ত করবে। তাছাড়া সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে তদন্ত সাপেক্ষে বলা যাবে কারা এই ঘটনা ঘটিয়েছে।

এদিকে অপহৃত ব্যাংক ম্যানেজার নিজাম উদ্দিনের এখনও কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি।

ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে নিজে তদারকি করছেন পুলিশের মহাপদির্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন। তিনি বলেন, তদন্ত সাপেক্ষে এটা নিশ্চিত হওয়া যাবে। যে এটা করেছে তাকে আমরা আইনের আওতায় এনে কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা করবো।


এ সম্পর্কিত

Theme Created By ThemesDealer.Com