১২:৫৮ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ঘিওর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পুরাতন ভবন পানির দরে বিক্রি, ভেষজ বাগানেও দুই বরপুত্রের দুর্নীতি

এ.বি.খান বাবু, বিশেষ প্রতিবেদক:

মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সোর দুর্নীতিবাজ দুই বরপুত্রের অভিনব অনিয়ম ও দুর্নীতির থাবায় ভেঙে পড়েছে স্বাস্থ্য সেবা ব্যবস্থার পরিবেশ।

বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, ঘিওর উপজেলা সরকারি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সোর স্বাস্থ্য ও প.প. কর্মকর্তা হাসিব আহসান ও হাসপাতালের কর্মচারী নিরাপদ খাদ্য পরিদর্শক মো. মোয়াজ্জেম হোসেন মিলে অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে হাতিয়ে নিয়েছেন লক্ষ লক্ষ টাকা। এই স্বাস্থ্য কর্মকর্তা অবৈধ পন্থায় দফায় দফায় গ্রেড পরিবর্তন করে কৌশলে বসেছেন কর্মকর্তার বড় চেয়ারে!

অভিযোগে প্রকাশ, ২৫ শয্যা বিশিষ্ট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এর পুরাতন একটি দুইতলা ভবন ২০২৩ সালে বিক্রি করা হয়েছে পানির দামে। টেন্ডারে ভবনের উল্লেখ্য বিক্রয় মূল্য নির্ধারণ ছিল ২৮ লক্ষ ৬৯ হাজার ৩৮ টাকা ১৬ পয়সা। অথচ সেখানে ভবনটি বিক্রি হয়েছে মাত্র ১২ লক্ষ টাকায়। এখানে আওয়ামিলীগ পন্থী ঠিকাদারদের কৌশলে জিতিয়ে দিয়ে দুর্নীতির মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে অভিযুক্ত এই দুর্নীতিবাজ দুই বরপুত্রের বিরুদ্দে।

অপর দিকে ২০২৩ সালে ভেষজ বাগান-২ এর নামে নাম মাত্র বেড়া দিয়ে অল্প কিছু গাছ রোপন করে লক্ষাধিক টাকার বিল দেখিয়ে এখান থেকেও হতিয়ে নিয়েছেন প্রায় ৭০ হাজার টাকা।

বিশ্বস্ত একাধিক সূত্র জানায়, নিরাপদ খাদ্য পরিদর্শক মো. মোয়াজ্জেম হোসেন তিনি বেশি সময় ফিল্ডে না গিয়েই অফিসে বসেই ভ্রমণ বিল, ট্রেনিং সংক্রান্ত ভাতা, ভুয়া বিল ভাউচার, অনিয়মের মাধ্যমে কোয়াটার বরাদ্দ প্রদান, ভর্তি রোগীদের খাবারের সঠিক তদারকি না করা সহ অনিয়ম দুর্নীতির সাথে জড়িত রয়েছেন। এতে করে তিনি অল্প দিনেই হয়েছেন আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ। যেন দেখার কেউ নেই।

নাম না প্রকাশে অনিচ্ছুক উপজেলার বিভিন্ন ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের কিছু মালিক-ম্যানেজার জানান, নিরাপদ খাদ্য পরিদর্শক মো. মোয়াজ্জেম হোসেন বিভিন্ন সময়ে অনুষ্ঠানের কথা বলে তাদের কাছ থেকে নিয়ে থাকেন মোটা অংকের সেলামি। তারা স্থানীয় কিছু হলুদ সাংবাদিকদের টেন্ডার বিজ্ঞপ্তি ও বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দিয়ে লুটপাট করেছেন প্রচুর টাকা-পয়সা। তাদের মুখোশের আড়ারে রয়েছে ভয়ংকর সব রূপ। এই দুই রাঘব বোয়ালের থাবায় বর্তমানে মানুষজন অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে।

ঘিওর বাজারের নাম না প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক মিষ্টি ব্যবসায়ীরা জানান, হাসপাতালের নিরাপদ খাদ্য পরিদর্শক মো. মোয়াজ্জেম হোসেন দুই চার মাস পর-পর দোকানে এসে মুচকি হাঁসি ও মধুর কথা বলে টাকা না দিয়েই ১ কেজি থেকে ২ কেজি পর্যন্ত মিষ্টি-দই নিয়ে যান নবাবের মতো। এসব না দিলে ভ্রাম্যমান মোবাইল কোর্টের জরিপানার ভয়-ভীতি দেখানো হয়।

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সোর নিরাপদ খাদ্য পরিদর্শক মো. মোয়াজ্জেম হোসেনের সাথে তার মুঠোফোন কথা হলে তিন জানান, আমি ও আমার স্যার কোন অনিয়ম- দুর্নীতির সাথে জড়িত নেই। আমার বস খুব ভাল মনের মানুষ।

স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মো. হাসিব আহসান বলেন, আমার বিরুদ্ধে আনা সকল অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ মিথ্যা। আমি কোন অনিয়ম-দূর্নীতি করিনি। তবে হাসপাতালে ভিতরে বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের অবাধ বিচরনের ফলে স্বাস্থ্য সেবার কিছুটা বিঘ্নিত হচ্ছে। এ বিষয়ে তাদের একাধিকবার সতর্ক করা হয়েছে। প্রয়োজনে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

উল্লেখ্য, গত ১৭ আগস্ট- ২৪ ঘিওর হাসপাতালের সংস্কারের দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছাত্ররা বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ এনে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে ২৪ ঘন্টার আলটিমেটাম প্রদান করেন।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

প্রকাশকাল : ০৮:৪৩:৩৮ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪
৪১১ Time View

ঘিওর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পুরাতন ভবন পানির দরে বিক্রি, ভেষজ বাগানেও দুই বরপুত্রের দুর্নীতি

প্রকাশকাল : ০৮:৪৩:৩৮ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪

মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সোর দুর্নীতিবাজ দুই বরপুত্রের অভিনব অনিয়ম ও দুর্নীতির থাবায় ভেঙে পড়েছে স্বাস্থ্য সেবা ব্যবস্থার পরিবেশ।

বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, ঘিওর উপজেলা সরকারি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সোর স্বাস্থ্য ও প.প. কর্মকর্তা হাসিব আহসান ও হাসপাতালের কর্মচারী নিরাপদ খাদ্য পরিদর্শক মো. মোয়াজ্জেম হোসেন মিলে অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে হাতিয়ে নিয়েছেন লক্ষ লক্ষ টাকা। এই স্বাস্থ্য কর্মকর্তা অবৈধ পন্থায় দফায় দফায় গ্রেড পরিবর্তন করে কৌশলে বসেছেন কর্মকর্তার বড় চেয়ারে!

অভিযোগে প্রকাশ, ২৫ শয্যা বিশিষ্ট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এর পুরাতন একটি দুইতলা ভবন ২০২৩ সালে বিক্রি করা হয়েছে পানির দামে। টেন্ডারে ভবনের উল্লেখ্য বিক্রয় মূল্য নির্ধারণ ছিল ২৮ লক্ষ ৬৯ হাজার ৩৮ টাকা ১৬ পয়সা। অথচ সেখানে ভবনটি বিক্রি হয়েছে মাত্র ১২ লক্ষ টাকায়। এখানে আওয়ামিলীগ পন্থী ঠিকাদারদের কৌশলে জিতিয়ে দিয়ে দুর্নীতির মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে অভিযুক্ত এই দুর্নীতিবাজ দুই বরপুত্রের বিরুদ্দে।

অপর দিকে ২০২৩ সালে ভেষজ বাগান-২ এর নামে নাম মাত্র বেড়া দিয়ে অল্প কিছু গাছ রোপন করে লক্ষাধিক টাকার বিল দেখিয়ে এখান থেকেও হতিয়ে নিয়েছেন প্রায় ৭০ হাজার টাকা।

বিশ্বস্ত একাধিক সূত্র জানায়, নিরাপদ খাদ্য পরিদর্শক মো. মোয়াজ্জেম হোসেন তিনি বেশি সময় ফিল্ডে না গিয়েই অফিসে বসেই ভ্রমণ বিল, ট্রেনিং সংক্রান্ত ভাতা, ভুয়া বিল ভাউচার, অনিয়মের মাধ্যমে কোয়াটার বরাদ্দ প্রদান, ভর্তি রোগীদের খাবারের সঠিক তদারকি না করা সহ অনিয়ম দুর্নীতির সাথে জড়িত রয়েছেন। এতে করে তিনি অল্প দিনেই হয়েছেন আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ। যেন দেখার কেউ নেই।

নাম না প্রকাশে অনিচ্ছুক উপজেলার বিভিন্ন ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের কিছু মালিক-ম্যানেজার জানান, নিরাপদ খাদ্য পরিদর্শক মো. মোয়াজ্জেম হোসেন বিভিন্ন সময়ে অনুষ্ঠানের কথা বলে তাদের কাছ থেকে নিয়ে থাকেন মোটা অংকের সেলামি। তারা স্থানীয় কিছু হলুদ সাংবাদিকদের টেন্ডার বিজ্ঞপ্তি ও বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দিয়ে লুটপাট করেছেন প্রচুর টাকা-পয়সা। তাদের মুখোশের আড়ারে রয়েছে ভয়ংকর সব রূপ। এই দুই রাঘব বোয়ালের থাবায় বর্তমানে মানুষজন অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে।

ঘিওর বাজারের নাম না প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক মিষ্টি ব্যবসায়ীরা জানান, হাসপাতালের নিরাপদ খাদ্য পরিদর্শক মো. মোয়াজ্জেম হোসেন দুই চার মাস পর-পর দোকানে এসে মুচকি হাঁসি ও মধুর কথা বলে টাকা না দিয়েই ১ কেজি থেকে ২ কেজি পর্যন্ত মিষ্টি-দই নিয়ে যান নবাবের মতো। এসব না দিলে ভ্রাম্যমান মোবাইল কোর্টের জরিপানার ভয়-ভীতি দেখানো হয়।

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সোর নিরাপদ খাদ্য পরিদর্শক মো. মোয়াজ্জেম হোসেনের সাথে তার মুঠোফোন কথা হলে তিন জানান, আমি ও আমার স্যার কোন অনিয়ম- দুর্নীতির সাথে জড়িত নেই। আমার বস খুব ভাল মনের মানুষ।

স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মো. হাসিব আহসান বলেন, আমার বিরুদ্ধে আনা সকল অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ মিথ্যা। আমি কোন অনিয়ম-দূর্নীতি করিনি। তবে হাসপাতালে ভিতরে বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের অবাধ বিচরনের ফলে স্বাস্থ্য সেবার কিছুটা বিঘ্নিত হচ্ছে। এ বিষয়ে তাদের একাধিকবার সতর্ক করা হয়েছে। প্রয়োজনে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

উল্লেখ্য, গত ১৭ আগস্ট- ২৪ ঘিওর হাসপাতালের সংস্কারের দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছাত্ররা বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ এনে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে ২৪ ঘন্টার আলটিমেটাম প্রদান করেন।